কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলনকৃত ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে। ২২৭ কোটি টাকার বর্তমান বাজার দরের কয়লা হজম করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে প্রায় সোয়া লাখ টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার পর এটা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় মামলা করতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এদিকে আজ সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দ্রুত স্বাভাবিক করার নির্দেশ দিয়েছেন। কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধানের ঘোষণা দেওয়ার পর সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও থনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান।

কয়লার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তিনটি ইউনিটে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার অভাবে ইতিমধ্যে দুটি ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর একটি ইউনিট থেকে ২৭৫ মেগাওয়াটের স্থলে উৎপন্ন হচ্ছে মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কয়লার অভাবে এটিও যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ঘটনার পরিপূর্ণ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এ ঘটনায় পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে একটি মামলা করার জন্য। কয়লা গায়েবের ঘটনা একদিনে ঘটেনি। আগে পরে যারা জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কালকে মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাবো আশা করছি। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে প্রতিমন্ত্রী রংপুরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আগামী একমাস রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুতের সংকট থাকবে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সিরাজগঞ্জের কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে সেখানে লো ভোল্টেজের সংকট থাকবে।

এর আগে খনির উৎপাদিত কয়লার মজুদ ও বিক্রয়ের মধ্যে বড় ধরনের তারতম্য ধরা পড়ে। এর পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিকটন। যার মূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল পরিমাণ কয়লা গায়েবের ঘটনায় পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে সিস্টেম লসের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক এ বি এম কামরুজ্জামান রবিবার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য আবু সাঈদ গত ১৮ জুলাই কয়লা খনি পরিদর্শনে এলে কয়লা মজুদের পরিমাণে গরমিলের খবর প্রথম প্রকাশ পায়।

এ ব্যাপারে খনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ খনিতে কয়লা উৎপাদন শুরু হয় ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জুন থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। ১২১০ নম্বর ফেইজের কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৬ জুন থেকে ১৩১৪ ফেইজের উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়।

কয়লা মজুদের তারতম্য প্রসঙ্গে প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন বলেন, ‘প্রথম থেকেই ইয়ার্ডের কয়লার প্রকৃত মজুদ ও রেজিস্ট্রারে তোলা কয়লা মজুদের হিসাবের মধ্যে সমন্বয় করা হয়নি। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ কয়লার সিস্টেম লস এ হিসাবের আওতায় না নেওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’